১৯ হাজার টাকায় ১৯ দিনের ভারত ভ্রমণ ( পর্ব-১)

ফাহিম কবীর

 

এটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নের ফসল । গত ২৮ মে'১৯ ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে সম্পূর্ণ রুট কাভার করে ফের ঢাকায় ফিরি ১৬ জুন'১৯ । এই রুট টা পুরোটা একটা সাইকেলের মতো । দিল্লি থেকে এক পথে গিয়ে ফের অন্য পথে দিল্লিতেই ফেরা ।

যাহোক, এটা ছিলো আমার চতুর্থবারের মতো ভারত ভ্রমণ । এর আগে এই ট্যুরের পার্টনার, বন্ধু সুফল সহ মোট চার বন্ধু মিলে ২০১৮ সালের ২২ মার্চ ১২ দিনের সফরে একবার সিমলা-মানালি ঘুরে এসেছি । তখনও সত্যি বলতে লাদাখের ব্যাপারে এতো বেশি ক্রেজ বা জানাশোনা ছিলো না । মানালিতে গিয়ে লাদাখের ব্যাপারে আরো স্পষ্টভাবে জানতে পারি । কিন্তু তখনো মানালি-লেহ রুট ওপেন হয়নি । তাই এক বুক আফসোস নিয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম । সেই আফসোসের পরম্পরায় এবার গেলাম বিখ্যাত এই ট্রান্স হিমালয়ান সাফারি কাভার করতে ।

সত্য বলতে কি আমরা গিয়েছিলাম কাশ্মীর বেড়াতে । লাদাখ রেখেছিলাম বোনাস হিসেবে। প্রকৃতপক্ষে ছবিতে লাদাখের ধূসর বর্ণের প্রকৃতির প্রতি আমার কখনোই তেমন কোন আকর্ষণ তৈরি হয়নি । আমি ওখানে গিয়েছি স্রেফ লাদাখের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখে। যাওয়ার পরে মনে হয়েছে - হ্যাঁ এটা সত্যিই অতুলনীয় এবং অবর্ণনীয় সুন্দরতম একটি জায়গা । সেই সাথে ভরপুর এডভেঞ্চার । আহ্‌! মনপ্রাণ ভরে গেছে একদম। তৃপ্ত নিয়ে ঘরে ফিরেছি ।

 

লাদাখ-কাশ্মীর নিয়ে অনলাইনে শত শত আর্টিকেল পড়েছি, ইউটিউব-ফেসবুকে শতশত ভিডিও দেখেছি এসব নিয়ে, এসব রুটে ঘুরে এসেছে এমন অনেকের সাথে কথা বলেছি । সেসব সঞ্চিত জ্ঞানের আলোকে নিজেরা ঘুরে এসেছি । এরপরে সেই পাঠ্য জ্ঞানের সাথে নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার মিশ্রণ ঘটিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি আজকের এই সিরিজটি । আমি সবসময়ই সেই সব কথা লিখতে চেষ্টা করি, যেই কথাগুলো অন্য কেউ সচরাচর বলে না, কিন্তু কথাগুলো জানা দরকার । এই সিরিজেও সেরকম কিছু কথাই খুঁজে পাবেন আশা করি ।

 

বাজেট প্রণয়নঃ

 

আমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিলো টাকা জোগাড় করা । দীন-দরিদ্র মানুষ আমি, এতো টাকা খরচ করে ঘুরতে যাওয়াটা খুব কঠিন ছিলো আমার জন্য । তবুও আন্তরিকতা ছিলো বলেই হয়তো কিভাবে কিভাবে ম্যানেজ করে ফেললাম । ২০ হাজার টাকায় কাশ্মীর-লাদাখ ঘোরা যে অসম্ভব ছিলো, সেটা বিভিন্ন ট্রাভেল এক্সপার্টদের সাথে কথা বলে মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম । সেই হিসেবে ধরেই নিয়েছিলাম যে কষ্ট করে ট্যুর দিলেও অন্তত ২৫হাজার লাগবেই । তাও এই বাজেটের কথা কাউকে বলতাম না, কারণ এটা বললেই সবাই বলতো ২৫হাজার দিয়েও পসিবল না । কিন্তু বাস্তবতা তো দেখছেনই ।

সত্যি বলতে আরো খরচ করার সুযোগ ছিলো । আরো ভালো কোন হোটেলে থাকতে পারতাম, ভালো গাড়িতে চড়তে পারতাম, আরো ভালো খেতে পারতাম। কিন্তু বাজেটের সীমাবদ্ধতায় অনেক কিছুই করা হয়নি । তাই বলে অনুগ্রহ করে ভাববেন না যে আমরা টাকা বাঁচানোর ধান্দায় ক্ষুধার কষ্ট করেছি বা কোন সুন্দর দৃশ্য উপভোগ থেকে নিজেদের বিরত থেকেছি। ট্যুর শেষে কোন আফসোস ছিলো না । যা পেয়েছি, তাই তো অমূল্য । সারাজীবন এই স্মৃতি হাতড়ে বেড়াতে পারবো। আপনাদের অনেকেই আমার অনেক ভুল ধরবেন । যদি সেরকম ইচ্ছে থাকে, তবে দয়া করে ঘুরে এসে ভুল ধরবেন । আমি আন্তরিকভাবে গ্রহণ করবো ।

আমি এই ধরণের সিরিজ লেখার মাধ্যমে শুধুমাত্র তাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে চাই যারা টাকার দিকে তাকিয়ে ভ্রমণের সাহস পায়না। সত্য বলতে কি আমি হিসেব করে দেখলাম, ঢাকা থেকে আমি যদি শুধু ৬ দিনে কাশ্মীর ঘুরে আসতাম তাহলে আপডাউন মিলিয়ে ১২ দিনে আমার খরচ হতো ১৩,০০০ টাকারও কম । এতো কমে কাশ্মীর ঘোরা যায় জানলে আমি অন্তত আরো আগেই কাশ্মীর ঘুরে আসতাম । আমি নিজে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে এসে সেই জানানোর কাজটাই করছি, যাতে মানুষ সাহস করতে পারে ।

 

প্রস্তুতিঃ

ঈদের আমেজ শুরু হয়েছে একটু একটু করে । আর কিছুদিন পরেই ৫ জুন(২০১৯) ঈদ-উল-ফিতর । আমরা দ্রুত বাংলাদেশ ত্যাগ করতে চাচ্ছিলাম ঈদের ঝামেলা এড়াতে । ভিসা ডেলিভারি তারিখ ছিলো ২৭ মে। ঢাকা থেকে বেনাপোলগামী ২৮ মে রাতের বাসের টিকিট (হানিফ) কেটেছিলাম ভিসা হাতে পাবার কয়দিন আগেই । জনপ্রতি ৫০০ টাকার ভাড়া গেলো ৬২০ টাকা । কি আর করা যাবে, অগত্যা নিতে হলো। ভিসা হাতে পেয়ে পরদিনই আমাদের ভ্রমণ শুরু হলো ।

প্রসঙ্গত, বলি রাখি - আমাদের পরিকল্পনা ছিলো যে আমরা কাশ্মীর ঘুরবো, এরপরে সেখান থেকে কারগিল হয়ে লেহ দিয়ে মানালি হয়ে দিল্লিতে ব্যাক করবো। লাদাখ যাবার জন্য কারণ হিসেবে দুইটি বিষয় টেনে আনলাম -

 

১। প্যাংগং লেক, নুব্রা ভ্যালি এবং তুরতুক ভিলেজ ভ্রমণ

 

২। লেহ থেকে মানালির এক্সট্রিম রোড ট্রিপ এনজয় করা

 

এই দুই পছন্দের যেকোন একটা করতে পারলেও আমাদের লাদাখ সফর সফল হিসেবে ধরে নিতাম । তবে পরিকল্পনা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ছিল। কারণ বাংলাদেশী হিসেবে লাদাখের বিভিন্ন জায়গা (লেহ সাইট সিয়িং বাদে) ভ্রমণের অনুমতি প্রাপ্তি প্রায় অসম্ভব ছিলো । আমাদের জন্য দিল্লি হাই কমিশন থেকে অনুমতি নিতে হয় । দিল্লি হাই কমিশন পাঠায় দিল্লিস্থ বাংলাদেশী হাই কমিশন থেকে রেফারেন্স আনার জন্য । আর বাংলাদেশের হাই কমিশন কখনোই সাধারণ মানুষদের রেফারেন্স দেয় না । তার মানে এক নম্বর অপশন শুরুতেই ভঙ্গুর দশায় রয়েছে ।

শ্রীনগর টু লেহ রোড প্রায় সারাবছর খোলা থাকলেও লেহ টু মানালি রোড বছরের শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু মাসেই খোলা থাকে । প্রতি বছর এপ্রিলের দিকে লেহ-মানালি রোড খোলা হলেও এই বছরে সেটা এই মে মাসের শেষে এসেও খোলা হয়নি । সবাই শুধু বলে এই খুব শীঘ্রই খুলে যাবে । ঢাকা থেকেই এই ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছিলাম লাদাখের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট গ্রুপগুলো থেকে । রুট আর ওপেন হয় না । তারমানে লাদাখ ভ্রমণের দুই নম্বর কারণটাও খুব একটা শক্ত ভিত্তি পায়নি । এদিকে ছুটিও শুরু হয়ে যাচ্ছে, এই চিন্তায় তো আর ঢাকায় বসেও থাকতে পারছিলাম না । সবমিলিয়ে কপালের উপরে ভরসা করে পথে বের হলাম ।

এই বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কোনই কমতি ছিলো না। বলা যায় এই অতিরিক্ত উদ্বেগ না থাকলে আমাদের কাশ্মির অংশের ভ্রমণটা আরেকটু উপভোগ্য হতে পারতো । সবসময় দুই বন্ধু লাদাখ-লাদাখ করে জিকির করতাম একপ্রকার । আগেরবার মানালি থেকে ঘুরে গিয়েছি । এবার যদি শ্রীনগরে এসেও লাদাখ যেতে না পারি, জীবনে আর কোনদিন আমাদের লাদাখ সফর হতো কিনা - এই বিষয়ে বিস্তর সন্দেহের অবকাশ ছিলো।

এরকম একটি ভঙ্গুর প্ল্যান নিয়েই আমাদের যাত্রা চলছিলো । আমাদের হাতে যেহেতু সময় আছে, তাই আমরা চাইছিলাম লাদাখ যেতে না পারলে অন্য কোথাও যাবো । তাজমহল, উত্তরাখাণ্ড বা রাজস্থান । বাইপাস প্ল্যান হিসেবে রেখে দিয়েছিলাম এসব ।

এরপর এতো সকল অনিশ্চয়তাকে সাথে নিয়েই শুরু হলো আমাদের পথচলা । মহান আল্লাহ পাকের কাছে অশেষ শুকরিয়া । আমরা যখন যেখানে গিয়েছি, সৌভাগ্যবশত সেখানকার সব দরজা অটোমেটিক খুলে গেছে । কিভাবে কি হলো, কি হতে পারতো-এসব মিলিয়েই এই সিরিজটি।

উল্লেখ্য, হিসাবের সুবিধার্থে আমি এখানে দুইজনের খরচ সব একসাথে তুলে ধরলাম । একদম শেষে গিয়ে ক্যালকুলেট করে জনপ্রতি খরচটা বের করবো । এই রুট বা আমাদের এই ভ্রমণের গল্পগুলো জানতে নিচের সিক্যুয়াল অনুযায়ী পড়তে থাকুন । আশা করি হতাশ হবেন না ।

 

ঢাকা থেকে প্রস্থানঃ(২৮/০৫/১৯)

২৮ তারিখ রাতে যথাসময়ে চলে গেলাম রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে । ঈদের বাকি আরো ৭ দিন । ঘরমুখো মানুষের ভীড় শুরু হয়েছে । আমি গাবতলী গিয়ে সুফলের জন্য অপেক্ষা করছি । অতীতের সবগুলো ট্যুরের মতো আজকেও সে দেরি করে হাজির হলো গাবতলীতে। তাও ভালো বাস ছাড়ার আগেই এসেছে । বাসে উঠে পড়লাম দুই বন্ধু । বরাবরের মতো আমি জানালার পাশে, আর ও করিডোরের সিটে বসলো । রাত বাজে প্রায় ১১ টার মতো । রাস্তা প্রায় ফাঁকাই ছিলো । চোখ খুলেই দেখলাম আমরা চলে এসেছি ফেরিঘাটে । দীর্ঘ সিরিয়াল পার করে ফেরি পার হতে হতে আমাদের অনেক সময় লেগে গেলো । সুফলের আম্মা আমাদের দুইজনের জন্য নাস্তা দিয়েছিলেন, গাড়িতে বসেই সেগুলো খেলাম দুই বন্ধু মিলে । 

২৯ তারিখ একদম ভোর বেলায় গিয়ে বেনাপোলে পৌঁছালাম । সেখানে থেকে জনপ্রতি ১০ টাকা হারে অটো ভাড়া দিয়ে চলে গেলাম বর্ডারে । দুইজনে ট্রাভেল ট্যাক্স আর এন্ট্রি ফি দিলাম মোট ১০৯০ টাকা । এরপরে চলে গেলাম ইমিগ্রেশনে । কোন দালালের সহযোগিতা ছাড়া নিজেরাই সকল প্রসিডিউর শেষ করে চলে গেলাম ইণ্ডিয়ান কাস্টমসে । সেখানে লাগেজ+পাসপোর্ট চেক করে যেখানে সেখানের এক বজ্জাত অফিসার সুফলকে ধমক দিয়েই আমাদের দুইজনের কাছে থেকে ২০০ টাকা নিলো। সুফলও কথা না বাড়িয়ে দিয়ে দিলো । মেজাজ আবার খারাপ হয়ে গেলো। ইমিগ্রেশনের সকল কাজ শেষ করে চলে গেলাম পেট্রাপোল, ভারতে । ঘড়িতে তখন সম্ভবত সাড়ে আটটা বাজে । আধাঘণ্টা পিছিয়ে দিলাম । বেজে গেলো আট টা । শুভ সকাল ভারত । 

 

বেনাপোল থেকে কলকাতাঃ(২৯/০৫/১৯) 

বেনাপোলে পৌঁছেই দুই বন্ধু ছড়িয়ে গেলাম দুই দিকে । সবগুলো দোকান খুঁজে সবচেয়ে বেশি রেট দিলো যে তার কাছে থেকে টাকা ভাঙ্গিয়ে নিলাম। রেট পেলাম ০০ টাকায় ৮৩.৬৫ রুপী ।  

এই বিষয়টা আমি সবসময় গুরুত্ব দেই । আমাদের দুইজনের কাছে টাকা ছিলো মোট ৭৫,০০০ । যদি রুপী করার সময়ে শতকরা ২০ পয়সা করেও কম পাই তাহলে ৭৫০০০ টাকায় লস যায় ১৫০ রুপী । একটু সতর্ক হলেই এই ক্ষতিটা কমানো যায় । 

বেনাপোল থেকেই আমাদের ভিসা, পাসপোর্ট ফটোকপি করিয়ে নিলাম কয়েক কপি । এরপরে দ্রুত প্রস্থান করলাম কলকাতার উদ্দেশ্যে । যত দ্রুত কলকাতায় গিয়ে ফেয়ারলি প্লেসে যেতে পারবো, ততোই সেদিনের ট্রেনের টিকিট পাবার সম্ভাবনা বাড়বে । সেই উদ্দেশ্যেই উঠে পড়লাম বনগাঁগামী অটোতে । অটোভাড়া জনপ্রতি ৩০ রুপী । বনগাঁ নেমেই জনপ্রতি ২০ রুপী হারে টিকিট কেটে উঠে গেলাম কলকাতাগামী বনগাঁ লোকালে, যেটা কলকাতার শেয়ালদা স্টেশনে থামে । এই ট্রেনের জার্নি সবসময়ই বেশ কষ্টদায়ক । কারণ সবসময়ই প্রচুর ভীড় লেগেই থাকে । প্রায় ৮০ কিলোমিটার যেতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘন্টা, সেই হিসেবে ভাড়া একদম কম । 

 

ফেয়ারলি প্লেসঃ

শেয়ালদা নেমেই সেখানে থেকে ফেয়ারলি প্লেস গামী বাসে উঠে পড়লাম। ভাড়া জনপ্রতি ৯ রুপী । আজকে বসে বসে যত দ্রুত লিখছি, ফেয়ারলি প্লেসে মোটেও ততো দ্রুত যাওয়া হলো না, যদিও অনেক চেষ্টা করেছিলাম। যখন ফেয়ারলি প্লেসে গেলাম তখন প্রায় সাড়ে তিনটা বাজে। মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলো । এই জায়গাতে প্রতিবারই যত দ্রুতই আসতে চাইনা কেনো, কিভাবে যেন দেরি হয়ে যায় । যাহোক, টিকিট কাটার জন্য ফরম এবং টোকেন সংগ্রহ করলাম ।

মনে রাখবেন, টিকিট কেনার জন্য কিন্তু মোবাইল নম্বর লাগে । আর লাগে পাসপোর্ট এবং ভিসার (ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশের ডিপার্চার সিল এবং ভারতের এরাইভাল সিলের সহ) ফটোকপি । সঠিক পাতাটা কপি করা হলো কিনা নিজে যাচাই করে নেবেন, আমার ভুল হয়েছিলো এই কাজে । আমার পরামর্শ হলো, ভারতে প্রবেশ করেই বেনাপোল থেকেই একটা সিম নিয়ে নেবেন । ২৪ ঘন্টা পরে রান হবে, এমন সিম না । ইন্সট্যান্ট রান করে নিয়ে নেবেন । টাকা বেশি গেলেও তাই করবেন । কারণ ২৪ ঘন্টা পরে এক্টিভ হবার কথা বলে সিম বিক্রি করলেও অনেক সিমই পরে আর এক্টিভ হয়না । আর টাকাও বর্ডার থেকেই কনভার্ট করে নেবেন ।

অনেকেই সিম কেনা এবং টাকা কনভার্ট করার জন্য কলকাতা নিউ মার্কেটের পরামর্শ দিয়ে থাকেন । এই বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা ভালো না। তাই বর্ডার থেকেই এই কাজগুলো করা ভালো । ফটোকপিও এখানে থেকেই করাবেন পারলে । কারণ এখানে থেকে না করালে ফেয়ারলি প্লেসের সামনে থেকে করাতে হবে, যেখানে খরচ কিছুটা বেশি ।

এবার আমাদের গন্তব্য হলো জম্মুগামী কোন ট্রেন । কিন্তু সেই ট্রেন সহজে পাওয়া যায় না। যদি জম্মুর ট্রেন না পাই, বা দেরি হয় তাহলে দিল্লি দিয়ে ভেঙ্গে ভেঙ্গে যাবো, যাতে সময় নষ্ট না হয় । সাড়ে তিনটার দিকে কাউন্টারের সেই পূর্ব পরিচিত দিদির কাছে গিয়ে বসলাম দুই বন্ধু । জানতে পারলাম আগামীকালের জম্মুগামী জম্মু তাওয়াই এর টিকিট হবে। আরো জানতে পারলাম, সেদিনের-ই দিল্লিগামী কালকা মেইলের টিকিটও পাওয়া যাবে ফরেইন কোটায় । আমাদের আর পায় কে! দিদিকে দিল্লির টিকিট কেটে দিতে বললাম । কারণ দিল্লি থেকে বাসে বা ট্রেনে কোন সময় অপচয় না করেই আমরা কোন না কোনভাবে জম্মু যেতেই পারবো । বাট জম্মু তাওয়াই এর জন্য অপেক্ষা করলে একটি দিন অতিরিক্ত কলকাতায় থাকতে হবে । যেটা কোনমতেই কাম্য নয় । দিদি জানালেন, আর আধাঘন্টা দেরি করলে সেদিনের টিকিট আর পেতাম না। কারণ প্রতিদিন চারটার সময় শুধুমাত্র সেই দিনের সকল ট্রেনের ফরেইন কোটার টিকিট কাটার শেষ সময় । 

টিকিট কাটা শেষে খুব হালকা বোধ হলো । থ্রি টায়ার ননএসি স্লিপার, কলকাতা টু দিল্লি, কালকা মেইল, জনপ্রতি ভাড়া ৮৮৫ রুপী । টিকিট হাতে পেয়ে খুব খুশি খুশি লাগছিলো । একটুও সময় অপচয় হলো না । ট্রেন সেদিনই রাত ৭ টা ৪০ মিনিটে । 

 

ট্রেনের জন্য অপেক্ষাঃ 

টিকিট কাটা শেষে কলকাতার রাস্তায় বের হলাম । ঝামেলা নাই আর। আনন্দ চিত্তে হাঁটাহাঁটি করছিলাম দুই বন্ধু । দেশে থেকে এক বন্ধু মোবাইল কিনতে দিয়েছিলো । আমাদের কাছেও ফটো তোলার মতো ভালো কোন ফোন ছিলো না । তাই ফোন কেনাই এখন প্রথম লক্ষ্য ছিলো সেখানে থেকে হেঁটেই চলে গেলাম নিকটস্থ মোবাইল মার্কেটে । নিয়ে নিলাম একটা ফোন । হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম নেহেরু স্ট্রীটে । বলে রাখি, আমরা দেশে থেকেই একটা ভারতীয় সিম নিয়ে গিয়েছিলাম । ইন্ডিয়াতে গিয়ে সেটাই এক্টিভ করি । ১০০ রুপী লোড দিলাম । 

এভাবেই আমাদের ট্রেনে চড়ার সময় চলে এলো । সেখানে থেকেই চলে গেলাম হাওড়া স্টেশনে । লম্বা ভ্রমণের জন্য কিছু এক্সেসরিজ যেমন - জ্যাম, পাউরুটি, সাবান, শ্যাম্পু, পেস্ট কিনে নিলাম । হাওড়া স্টেশনের পাশেই একটা মুসলিম হোটেল আছে । বারেবারে সেখানে গিয়েই খাই । আজকেও তাই করলাম । ট্রেনের খাবার এভয়েড করতে সেই হোটেল থেকেই কিছু খাবার পার্সেল নিলাম । সব কাজ শেষে চলে গেলাম স্টেশনের ভেতরে । সারাদিন গোসল করিনি । তার উপরে ধকলও কম যায়নি । হাওড়া স্টেশনে ১০ রুপীর বিনিময়ে গোসলের ব্যবস্থা রয়েছে । আমি মাঝেমাঝেই সেখানে গোসল করি । যাহোক, সেদিনও গোসল করে ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম প্ল্যাটফর্মে । দেখি সুফল আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে আমার জন্য। দুই বন্ধু মিলে উঠে গেলাম আমাদের কালকা মেইলে গন্তব্য এখন দিল্লি । 

 

আজকের খরচঃ (২৯/০৫/১৯) 

 

ঢাকা-বেনাপোল(বাস) = ১২৪০ টাকা 

 

বেনাপোল-বর্ডার(অটো) = ২০ টাকা 

 

ট্রাভেল ট্যাক্স+এন্ট্রি ফি = ১০৯০ টাকা 

 

বর্ডারে উৎকোচ = ২০০ টাকা 

 

মোট = ২৫৫০ বাংলাদেশী টাকা । 

 

১০০ টাকায় ৮৩.৬৫ রুপী হিসেবে 

 

১। ২৫৫০ টাকা=২১৩৩রুপী 

 

২। পাসপোর্ট-ভিসা ফটোকপি= ৩০রুপী 

 

৩। বর্ডার-বনগাঁ = ৬০ রুপী 

 

৪। বনগাঁ-শেয়ালদা = ৪০ রুপী 

 

৫। শেয়ালদা-ফেয়ারলি প্লেস= ১৮রুপী 

 

৬। হাওড়া-দিল্লি(ট্রেন) = ১৭৭০রুপী 

 

৭। নেহেরু স্ট্রীট - হাওড়া = ১৮রুপী 

 

৮। ডিনার+পার্সেল = ২০০রুপী 

 

৯। সিম রিচার্জ= ১০০রুপী 

 

১০। এক্সেসরিজ + খাওয়াদাওয়া= ১৮৫রুপী 

 

মোট= ৪৫৫৪ রুপী । 

 

আমাদের র‌্যুট-ঢাকা>কলকাতা>দিল্লি>জম্মু>শ্রীনগর>কার্গিল>লেহ>প্যাংগং>লেহ>মানালি>দিল্লি>কলকাতা>ঢাকা

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন