সাইফ বরকতুল্লাহ
বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকায় গেলে মনটা সবুজ হয়ে যায়। প্রকৃতির নিবিড় ছোঁয়া আর বুক উজাড় করা সৌন্দর্য মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেয় সব ক্লান্তি। পাহাড়ি প্রকৃতির উচ্ছল ঝর্ণার শীতল স্পর্শ জীবনকে আনন্দময় করে। শুধুই কী পাহাড়? নদী, সাগর, দ্বীপ কিংবা প্রাচীন নিদর্শন। দর্শনীয় স্থান ঘুরলে নানা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয় জীবন। বাংলাদেশে একদিকে যেমন পাহাড়-পর্বত, অন্যদিকে সবুজের সমারোহ। দক্ষিণে রয়েছে বিস্তির্ণ বঙ্গোপসাগর। প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক পর্যটক দেশের এসব স্থান ভ্রমণ করেন। দেশ-বিদেশ থেকে আসেন ভ্রমণ অনুরাগীরা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে এখন ভ্রমণের হার বেড়েছে। পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে নানাভাবে তৈরি করা হয়েছে। সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও পর্যটনকে এগিয়ে নিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
দেশের পর্যটন বিকাশের জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। দ্রুত এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে গত সেপ্টেম্বরে সচিবালয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এ কথা বলেছেন। পৃথিবীর অনেক দেশের জিডিপির বড় অংশ আসে পর্যটন থেকে। এদিক দিয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। আমাদের জিডিপিতে পর্যটন খাত থেকে অবদান রাখতে পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে হবে। দেশের পর্যটন খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য সরকারের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। পাশাপাশি এটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতে পরিণত হবে।
পর্যটন খাতের বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যটন খাতে উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরে পর্যটনের প্রচার চালাচ্ছে। এশিয়ার মধ্যে অনেক দেশ নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ট্যুরিজমের মাধ্যমে তুলে ধরেছে। নেপাল, ভুটানের অর্থনৈতিক কাঠামো ততটা সমৃদ্ধ না হলেও পর্যটন খাতে উন্নতি সাধন করে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। হেরিটেজ ট্যুরিজমের মাধ্যমে অনেক দেশ বিপুল রাজস্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলোকে ঘিরে সেই সম্ভাবনা বিপুল। আর এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। শিক্ষা-গবেষণা ও পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক জরিপে দেখা গেছে, দেশের ১ দশমিক ৪১ শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে পর্যটন খাতে। এই শিল্পের মাধ্যমে দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বা মূল্য সংযোজন হচ্ছে ১৬ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে গণ্য করা হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড অ্যান্ড ট্যুরিজম করপোরেশনের তথ্যমতে, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ছিল ৩.৯ ভাগ। ২০২০ সাল নাগাদ এর পরিমাণ বেড়ে ৪.১ ভাগ হবে বলে সংস্থাটি আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। পর্যটন শিল্প অনেক উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি। আমাদের দেশেও এ শিল্পকে কাজে লাগাতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলাম লেখক