সিলেটের পাশেই এশিয়ার সবচেয়ে পরিছন্ন গ্রাম

দিবাকর

বাংলাদেশের কোল ঘেষাঁ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মেঘালয়। মেঘ-পাহাড়ের মিলনের এই রাজ্যে এক শান্ত-নিবিড় পরিছন্ন গ্রাম মাওলিনং। সিলেট জেলার সীমানা থেকে এই গ্রামের দূরত্ব মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। ২০০৩ সালে ‘ডিস্কভার ইন্ডিয়া’ গ্রামটিকে এশিয়ার সবচেয়ে পরিছন্ন গ্রাম হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। পরবর্তীতে আরও অনেকবার এই একই খেতাবে ভূষিত হয়েছে গ্রামটি।

রাস্তা ধরে যতই এগিয়ে যাবেন, মুগ্ধতা বাড়বে ততই

সাদা মেঘে ভরা নীল আকাশ, সবুজ গাছগাছালিতে ভরা পাহাড়, সর্বত্র বাহারি ফুলের মেলা- এই হলো মাওলিনংয়ের সাধারণ দৃশ্য। এই গ্রামের প্রতিটি রাস্তাই পাকা। পাকা রাস্তার দুইপাশে থরে থরে সাজানো পাতাবাহার ও ফুলের গাছ। সেই রাস্তা ধরে যতই এগিয়ে যাবেন, মুগ্ধতা বাড়বে ততই। পচাঁশি ফুট উঁচু একটি টাওয়ার আছে এখানে। এই টাওয়ারে উঠে মনখুলে সবুজ প্রকৃতি দেখা যায়। টাওয়ারে উঠতে জনপ্রতি খরচপড়ে ১০ রুপি। 

টাওয়ারে উঠে মনখুলে সবুজ প্রকৃতি দেখা যায়

গ্রামের ভেতর অজস্র ফুলের বাগান দেখে মনে হয় পুরো গ্রামটাই বুঝি বাগান, এর মাঝে মাঝে ছোট ছোট বাড়িঘর। প্রতিটি বাড়ির সামনে পেছনে শুধু ফুল গাছের সীমানা প্রাচীর। সারাবছরই এসব গাছে নানারকমের ফুলে ভরে থাকে। বাঁশ আর কাঠ দিয়ে বানানো বাড়িগুলো আহামরি হয়ত সুন্দর নয়। কিন্তু বাড়ির চারপাশের পরিচ্ছন্ন প্রকৃতি মন ভরিয়ে তোলে। লিভিংরুট ব্রিজ নামের একটি ব্রিজ আছে এখানে। গাছের শিকড় একটির সাথে একটি পেচিয়ে আছে পাহাড়ি নদীর ওপর। এই ব্রিজটি প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়েছে।

লিভিং রুট ব্রিজ

সাতশোর মতো মানুষের বসবাস এখানে। অধিকাংশ খাসিয়া উপজাতির। গ্রামের অধিকাংশ লোক শিক্ষিত যেটা অধিকাংশ পাহাড়ি গ্রামেই দেখা যায়না। ফলে সর্বত্র রুচির ছাপ। গ্রামের সবাই খুব সদালাপি। পর্যটকদের আনাগোনা থাকে বলে এখানকার বাসিন্দারা ইংরেজি বলায়ও বেশ পটু। গ্রামটিকে এত পরিছন্ন রাখে কি করে এখানকার আদিবাসীরা? উত্তরে তারা জানায় এই গ্রামে যেখানে সেখানে ময়লা ফেলানো নিষেধ। নিষেধাজ্ঞা আছে পলিথিনের ব্যবহারে। সবরকম ধূমপান নিষিদ্ধ। চলবে কোনও নেশাজাতীয় পানীয় খাওয়া। ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর রয়েছে বাঁশের ঝুড়ি।

ময়লা ফেলার ঝুড়ি

এখানকার অধিবাসীরা ছোট ছেলে মেয়েদের একদম শিশু বয়স থেকেই নিজে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার এবং আশেপাশের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখার শিক্ষা দেয়। এই গ্রামের শিশু-কিশোরদের সকালটা শুরু হয় রাস্তায় ময়লা পরিস্কার করে আর ঝরা পাতা কুড়িয়ে। স্কুলে যাবার আগেই ময়লার ঝুড়িগুলো খালি করে সব আবর্জনা ওরা এক জায়গায় জড়ো করে। এছাড়াও নিজেদের আঙিনা এবং বাড়ির আশেপাশের জায়গাগুলো পরিস্কার রাখতে হয় প্রতিটি পরিবারকে। এটাই এখানকার নিয়ম। প্রতিটি বাড়িতেই আছে স্বাস্থ্যসম্মত পয়ঃনিষ্কাষন ব্যবস্থা। এছাড়া প্রচুর গাছ লাগান এখানকার অধিবাসীরা।

আঙিনা এবং বাড়ির আশেপাশের জায়গাগুলো পরিস্কার রাখতে হয় প্রতিটি পরিবারকে

যেভাবে যাবেন: 

মাওলিনং যেতে আপনাকে সড়কপথের ওপর নির্ভর করতে হবে। কারণ, বাংলাদেশ থেকে ট্রেন কিংবা প্লেনে করে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং যাওয়া যায় না। সড়কপথে যেতে আপনাকে সিলেটের তামাবিল এবং মেঘালয়ের ডাউকি সীমান্ত থেকে ভিসা করিয়ে নিতে হবে। ডাউকি থেকে ট্যাক্সি কওে মাওলিনং যাওয়া যায়। তবে আপনার ভ্রমণপরিকল্পনায় যদি শিলং কিংবা চেরাপুঞ্জি থাকে তবে সেখান থেকেও আপনি ট্যাক্সি করে মাওলিনং যেতে পারবেন। এছাড়া শিলং বা চেরাপুঞ্জি থেকে বাসে করে মাওলিনংয়ে যাওয়া যায়।  সারা বছরই মাওলিনংয়ের আবহাওয়া ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। তবে জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই সময়টা মাওলিনং ভ্রমণের সব থেকে উপযুক্ত সময়। এই সময় পাহাড়ি এই গ্রামটি সুন্দরের পসরা সাজিয়ে পর্যটকদের ডাকে। থাকার জায়গা একদিনে মাওলিনং ঘুরে সিলেট কিংবা শিলং পৌঁছানো যায়। তবে কেউ যদি প্রকৃতির সান্নিধ্যে রাত কাটাতে চায় তার জন্য এখানে ছোট আকারের গেস্ট হাউস বা হোমিস্টেও ব্যবস্থা আছে। তারকা হোটেলের মতো না হলেও এই গেস্ট হাউসগুলো থাকার জন্য বেশ ভালো। খরচ পড়বে ২০০০ রুপির মতো।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন