ট্রাভেলগবিডি ডেস্ক
দিল্লি। স্বাধীন ভারতের রাজধানী শহর। ১৯১১ সালে কলকাতা থেকে এই শহরে ব্রিটিশ ভারতের রাধধানী স্থানান্তর করা হয়। মুঘল আমল থেকেই দিল্লি ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। এই শহরের অলি-গলিতে ছড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক সব জায়গা আর স্থাপনা। এই সব ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো সবসময় পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। তাই তো প্রতি বছর বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক ছুটে যায় দিল্লি দর্শনে। তবে দিল্লি শুধু ঘোরার নয় পেট পুরে খাওয়ার জন্যও বিখ্যাত। পুরনো দিল্লির আমাদের পুরনো ঢাকার মতোই খাবারের জন্য বিখ্যাত। পুরনো দিল্লির অলিগলিতে বাহারী রসনার পসরা সাজিয়ে বসে থাকে বিখ্যাত সব রসনালয়। ‘করিম’স হোটেল’ তেমনই এক শতবর্ষী রসনালয়।
বলা হয়ে থাকে, দিল্লিতে গিয়ে ‘করিমস’-এ না খেয়ে যে ফেরত আসে, তার দিল্লি সফর আট আনাই বাকি থেকে যায়। বিখ্যাত সব ফুড বগ্লার থেকে শুরু করে ভ্রমণ-অনুরাগীদের প্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফুড রিভিউ সাইটগুলো ‘করিমস’-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। টাইম ম্যাগাজিন থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে নামিদামী পত্রিকায় আর টিভির পর্দায় বারবার জায়গাা করে নেয় ‘করিমস’।
করিম’স হোটেলের যাত্রা শুরু হাজী করিম উদ্দিনের হাত ধরে। করিম উদ্দিনের বাবা মুহম্মদ আজিজ ছিলেন শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহের দরবারের বাবুর্চি। বাহাদুর শাহের নির্বাসনের মুহম্মদ আজিজ দিল্লি ছেড়ে মিরাটে আশ্রয় নেন। ১৯১১ সালে দিল্লির দরবার যখন রাজা পঞ্চম জর্জকে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করেন তখন তরুণ করিম উদ্দিন এক অভাবনীয় পরিকল্পনা নিয়ে মিরাট থেকে দিল্লিতে ফেরত আসে।
তার উদ্দেশ্য ছিল সংবর্ধনায় আসা সারা ভারতের লোকদের বাবার কাছ থেকে শেখা মুঘল রসনার স্বাদ দেওয়া। এই উদ্দেশ্যে তিনি ঐতিহাসিক জামা মসজিদের পাশেই একটি ধাবা স্থাপন করেন। সেই ধাবা থেকেই ১৯১৩ সালে আজকের বিখ্যাত করিম’স হোটেলের জন্ম। হোটেলটি ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে খাদ্যরসিকদের রসনা তৃপ্ত করে আসছে।
প্রথমদিকে হাজী করিম উদ্দিন শুধু আলু গোস্ত এবং ডাল-রুমালি রুটি বিক্রি করতেন। দিনে হোটেলটির খ্যাতি যেমন বেড়েছে, বেড়েছে তার রসনার পরিধিও। বর্তমানে শাহী দস্তর খাওন, নানা পদের মুরগী, কাবাব, পোলাও, নান রুটি, ক্ষীর পাওয়া যায়।
তবে ‘করিমস’-এর খ্যাতি তার কাবাব, মাংসের বিচিত্র রান্না আর বিরিয়ানির স্বাদে। গালি কাবাবিয়ান এলাকার সরু গলির ভেতরে আরও তস্য গলির মাথায় একেবারে গোবেচারা দর্শনের এই হোটেটির খাবার একবার খেলে সারা জীবন মুখে লেগে থাকার মতো। হোটেলটি সকাল ৯ থেকে রাত ১২ পর্যন্ত খোলা থাকে।