রোমাঞ্চকর রেমাক্রি!

সজল জাহিদ

অপরুপ তিন্দু আর বিস্ময়কর বড় পাথর পেরিয়ে রেমাক্রির দিকে এগিয়ে চলেছে আমাদের সরু ইঞ্জিন চালিত নৌকা। যেতে যেতে ভাবছিলাম রেমাক্রি হয়তো পাহাড়ের ঢালে সাদামাটা কোন একটা গ্রাম বা পাড়া অথবা বাজারের মত হবে। কিন্তু আমাদের নৌকা যতই এগিয়ে চলেছিল, রেমাক্রি যতই কাছে এগিয়ে আসছিল ততই আমার বিস্ময় বেড়ে চলছিল, কারন যে পাহাড়, যেমন নদী, যতটা ঘন অরণ্য আগে পেরিয়ে এসেছি, সামনে সেই পাহাড়, নদী আর অরণ্য আরো অপুর্ব, আকর্ষণীয় আর রোমাঞ্চকর হয়ে উঠেছে।রেমাক্রির যত কাছাকাছি এগিয়ে যাচ্ছিলাম পাহাড় গুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি বড়, পাথুরে, অরণ্য ঘেরা আর খাড়া হয়ে উঠছিল, পাহাড়ের মেঘ গুলো আরো ঘন এবং চঞ্চল হয়ে উড়ে বেড়াতে শুরু করেছিল, পাহাড়ি অরণ্য আগের চেয়ে অনেক ঘন একেবারে গহীন ও রোমাঞ্চকর হয়ে চারদিকের পাহাড় সারিকে ঢেকে ফেলছিল, কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়কর হয়ে যেটা দেখা দিয়েছিল, সবচেয়ে অবাক হয়ে অপলক চোখে যা দেখছিলাম সেটা হল সাংগুর শাখা, রেমাক্রি মুখ আর রেমাক্রি পাহাড় চুড়ায় দাড়িয়ে থাকা বর্ণিল কটেজ, পাহাড়ে গায়ে গায়ে, পাহাড়ের বারান্দায়, বেলকোনিতে রঙিন কটেজ গুলো।রেমাক্রি যে এতোটা অপুর্ব হবে, এতোটা মনকাড়া হয়ে, আমাকে এতোটা বিস্মিত করবে আমি ভাবতেই পারিনি। 

অপরুপা রেমাক্রি

ঠিক রেমাক্রিতে, তিন সাংগুর তিন শাখার মুখে, যাকে রেমাক্রি মুখ বলে সেখানে একটা ইট পাথরের ঘাটে আমাদের নৌকা থামলো। একে একে সবাই যার যার ব্যাকপ্যাক রেখে, নদী থেকে পাহাড়ের চুড়া পর্যন্ত কংক্রিটেরর সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলাম। যেখানে এক পাহাড়ের চুড়ায়, পাহাড়ে পিঠ কেটে বানানো বারান্দায় বানিয়ে রাখা হয়েছে রঙিন রঙিন কটেজ। বাশ, কাঠ আর কিছুটা ইট পাঘরের মিশ্রণে। যার একটাতে আমাদের আবাসনের ঠিকানা হল। অপুর্ব ছিল আমাদের কটেজের লোকেশন। যেখানে রুমের বারান্দা থেকে বসে, বা শুয়ে থেকে উপভোগ করা যায় মেঘ, পাহাড়, অরণ্য, বয়ে চলা নদী, বালুচর, পাথুরে নদী আর দিনে রাতে সারাক্ষণ প্রাণ ভরে উপভোগ করা যায় অবিরত বয়ে চলা, অনন্তকাল ধরে ঝরে পরা, বিস্ময়কর রেমাক্রি জলপ্রপাতের গান। ইচ্ছে হলেই সারাদিন ধরে দুচোখ ভরে দেখা যায় রেমাক্রি জলপ্রপাতের ঝরে পরা। কটেজের বারান্দায় বসে বা দাড়িয়ে থাকলে মাঝে মাঝে পাহাড়ের মেঘেরা এসে একটু ভিজিয়ে দিতে পারে আলতো পরশে, মিহি বাতাস প্রানকে প্রশান্তিতে ভরে দিতে পারে, ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুনিয়ে যায় অদ্ভুত সুরের গান।

নদীর কলকল বয়ে চলা মনকে করে তোলে চঞ্চল। এসব দেখে দেখে, চারদিকের প্রকৃতির কাছে হার মেনে গিয়ে, ইচ্ছে গুলো খুব অবাধ্য হয়ে মেঘেদের মত উড়ে বেড়াতে শুরু করে। আর সেই সাথে অদ্ভুত অদ্ভুত এক একটা ইচ্ছে হয়। কখনো কখনো ইচ্ছে হয় সাংগুর বয়ে চলার সাথে দূরে অজানায় ভেসে চলি, কখনো কখনো মনে হয় পাহাড়ের ভেসে চলা মেঘেদের সাথে উড়ে উড়ে অচেনা অরণ্যে হারাই, কখনো মনে হয় সাংগুর বালুচরে গিয়ে অখণ্ড অলস অবসর কাটাই। আর সবচেয়ে বেশি যে ইচ্ছেটা পাগল করে তোলে, সেটা হল, ইচ্ছে হয় সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা বা রাতে রেমাক্রির বিস্ময়, রেমাক্রির আভিজাত্য, রেমাক্রির সেরা উপহার বিশাল জল প্রপাতের মাঝে গিয়ে চুপ করে বসে থাকি, অবিরত ভিজি, সুখের অবগাহনে সিক্তা হই!কারন, রেমাক্রি পৌছে সবচেয়ে অবাক আর হতবাক হয়েছিলাম, আমার চোখে, বাংলাদেশে আমার দেখা সবচেয়ে অপুর্ব আর অভিভূত এবং বিস্ময়কর এই জলপ্রপাত দেখে, রেমাক্রি জলপ্রপাত! যাকে নিয়ে আলাদা করে গল্প না লিখলে মনের সাধ মিটবেনা, রেমাক্রি জল প্রপাতকে তার প্রাপ্য সম্মান জানানো হবেনা। তাই শুধু রেমাক্রি জলপ্রপাত নিয়েই থাকবে আলাদা গল্প।

 

২০ সেপ্টেম্বর ২০২০

 

ছবি-আহাদ ও লেখক

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন