রফিকুল ইসলাম রতন
ইতালির রাজধানী রোম শহরের আরও একটি ক্ষুদ্র স্বাধীন দেশ আছে, তার নাম ভ্যাটিকান সিটি। খ্রিস্টান ধর্মের ক্যাথলিক মতানুসারীদের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মীয় স্থান এটি। পোপ এ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান। এ রাষ্ট্রের আছে পৃথক পতাকা; আছে সংবিধান; পৃথক মুদ্রা; সিলমোহর ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সবকিছু। পোপের নিরাপত্তার জন্য আছে ১৩৫ সেনা সদস্য। এরা সুইজারল্যান্ডের। তাদেরকে বলে পটেনশিয়াল সুইস আর্মি। ১৯ থেকে ৩০ বছর বয়ষ্ক এই সেনা সদস্যরা কেউ বিয়ে করে না। পোপের খেদমতে এরা জীবন উৎসর্গ করেছে। কিন্তু ইতালির রাজধানী রোমে ভ্যাটিকান সিটি নামে স্বাধীন এই রাষ্ট্র থাকলেও কেন এর নিরাপত্তারক্ষীরা সুইস তা এক রহস্য। এই স্বাধীন রাষ্ট্রটির জনসংখ্যা মাত্র এক হাজার ১৬ জন। ভ্যাটিকান রাষ্ট্রের নাকি বিপুল ধন সম্পদ হীরা, মনি, মুক্তা স্বর্ণ, রৌপ্য ও নগদ অর্থ আছে। পোপ এসবের রক্ষক। পোপের এই রাজত্বে অপরাধ ও মদ খাওয়া পাশাপাশি চলে। এই হাজার নাগরিকদের অধিকাংশই নানা অপরাধে জড়িত বলে পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে। আর মদের মধ্যে ডুবে থাকে সবাই। এক হিসাবে বলা হয়েছে ভ্যাটিকানের একজন নাগরিক বছরে কমপক্ষে ৫৪.২৬ লিটার ওয়াইন পান করেন। এটাই নাকি বিশ্বের ক্যাথলিক ধর্মের তীর্থস্থান! এমন তথ্য জানাচ্ছে বিবিসি, গুগল আর উইকিপিডিয়া।
পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষুদ্র এই রাষ্ট্র ভ্যাটিকান রহস্যঘেরা এক দেশ। ৮০০ শতকের পর থেকে এই রাষ্ট্রের গোপন রহস্য কেউ জানেনা। জনশ্রুতি আছে পোপের গির্জার গোপন কুঠুরিতে আছে হাজার বছরের পুরোনো ইলেকট্রোমেগনেটিক রেডিয়েশন যন্ত্র বা টাইম ভিউয়ার। যা দিয়ে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দেখে থাকেন ফাদাররা। আবার কারো মতে এ গোপন কুঠুরিতে ৮৪,০০০ দলিল ও বইপত্র আছে। আছে মূল বাইবেলের কপি ও যিশুর আমলের চিঠিপত্র। এগুলোর মধ্যে গ্রিসের পতন থেকে যিশুর ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সব তথ্য নাকি সংরক্ষিত আছে। তাই এগুলো দেখার কারো অনুমতি নেই। পোপই এসবকিছুর একমাত্র রক্ষক। সাধারণ ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের যে পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি আছে তা মূল গির্জা থেকে অনেক দূরে। এটাকে বলা যায় সীমানা প্রাচীর। চারদিকে বিশাল বিশাল সুউচ্চ শত শত খুঁটির ওপর কারুকাজ করা ভবন। এই ভবনের শীর্ষে আছে অসংখ্য যিশুর মূর্তি। মাঝে অনেক বড় খোলা চত্ত্বর। এই চত্তরে আছে চোখ ধাঁধানো ফোয়ারা। এই চত্তর পেরিয়ে মূল প্রবেশদ্বারের সিঁড়ি। সিঁড়ি পেরিয়েই আর্কাইভ ভবন। এটির বহিরাংশ টিকিট কেটে দেখার সুযোগ মেলে সপ্তাহে তিনদিন। স্বর্ণ, ব্রোঞ্জ বা অজানা বস্তুতে নির্মিত যিশু খ্রিস্টের বিশালাকার মূর্তি দেখার সুযোগ নাকি কারোর নেই। কেন নেই তাও কেউ বলতে পারে না।
আর পোপের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ সে এক অকল্পনীয় ব্যাপার। রাষ্ট্রীয়ভাবে আমন্ত্রিত অতিথি ও রাষ্ট্রপ্রধানরাই কেবল নির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক পোপের সঙ্গে যৎসামান্য সময়ের জন্য দেখা করতে পারেন। এতকিছুর পরও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার পর্যটক ভ্যাটিকানে ভিড় করে, দূর থেকে ছবি তোলে, যিশুর প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। কেউ নাচে; কেউ বাইবেলের শ্লোক গায় আবার কেউ কেউ আনন্দ উচ্ছ্বাস করে। আমরাও ছিলাম ভ্রমণের আনন্দ উপভোগের দলে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইতালি সফরের বদৌলতে আমাদের এই সুযোগে হয়েছিল। মহামান্য পোপের সঙ্গে এবারো দেখা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ছোটবোন শেখ রেহানা, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, এমপি গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা। আমাদের সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং-এর সাইফুল কল্লোল, হাসান জাহিদ তুষার, মো. আশরাফ সিদ্দিকী বিটু এবং সফরকারি দলের হৃদয়, আল আমিনসহ আরও অনেকে। এখানে দিনের বেলায় ৫ থেকে ৭ ও রাতে ৩/৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার মধ্যেও প্রচণ্ড ভিড় সবসময় লেগেই থাকে। তবে এই শত সহস্র বছরের প্রাচীন স্থাপত্য শিল্পের কারুকাজ দেখে সত্যিই মুগ্ধ হতে হয়। লেখক: সম্পাদক, দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিন