পাহাড়ের খাঁজে লুকিয়ে থাকা এক গ্রাম

গোলাম মুকিত সরওয়ার

ঘাঙ্গারিয়া। হিমালয়ের ফুলেল উপত্যকা ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস’ এবং শিখদের জনপ্রিয় তীর্থস্থান হেমকুন্ড যাওয়ার বেসক্যাম্প হিসেবে পরিচিত ছোট্ট এই গ্রামটি। সুমদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১০০০৩ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই গ্রামটি হিমালয়ের ট্রেকারদের জন্য বিশ্রামস্থল হিসেবে পরিচিত। যদিও ঘোড়া এবং হেলিকপ্টারে এই গ্রামে যাওয়ার ব্যবস্থা আছে তবে ট্রেকিং করে এখানে গেলেও কেবল এই পাহাড়ি গ্রামের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়।  এর ট্রেকিং রুটটি বেশ সুন্দর। একপাশে বিশাল খাদের নিচে পুষ্পাওয়াতি নদী, অন্যপাশে পাহাড়। পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে ঝর্ণা। এক মনোরম পরিবেশ, যা হেলিকপ্টার দিয়ে গেলে বোঝা দুষ্কর। ঘাঙ্গারিয়াতে যাওয়ার পথে পড়ে বিশাল পাইন বন। লেপার্ড, এশিয়াটিক ব্লাক বেয়ার সহ নানা প্রাণীর ভয় থেকেই যায় এই অঞ্চলটিতে। তাই দুপুর ২ টার পর গোবিন্দঘাট থেকে বেস ক্যাম্পে আসা বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

ঘোড়া বা ট্রেকিং করে গেলে ঘাঙারিয়ার অনাবিল সৌন্দার্য উপভোগ করা যায়

গ্রামে ঢুকতেই বামদিকে পড়বে হেলিপ্যাড ও তাবুতে থাকার ব্যবস্থা। নির্দিষ্ট ভাড়ার বিনিময়ে এইসব তাবুতে থাকা যায়। পাহাড়ি ঝর্ণার শব্দে এসব তাবুতে রাতের ঘুম হয় আরও বেশি স্বপ্নিল। কিছুদূর উঠলেই ছোট ছোট দোতালা বাড়ির দেখা পাওয়া যায়। এগুলো অধিকাংশই হোটেল। অনেক কম খরচেই থাকা যায় হোটেলগুলোতে। অবশ্যই দামাদামি করে এসব হোটলে ওঠা উচিত। সারাবছর প্রচুর দর্শনার্থী থাকায় এসব হোটেলের চাহিদা বেশ। গ্রামে ছোট্ট একটা মেডিকেল সেন্টার, পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে। বিদেশি পর্যটকের সমাগম থাকায় এখানে বেশ ভালো মানের খাবার-দাবার পাওয়া যায়। ১৩০ রুপির ফ্রাইড রাইস দিয়ে অনায়াসে দুজন খাওয়া যায়, খিচুরির কথা আর নাইবা বললাম।

এই তাবুতে ভাড়ার বিনিময়ে রাত কাটানো যায়

এছাড়া স্থানীয় মজার সব খাবার নিয়ে পর্যটকের অপেক্ষায় থাকে ঘাঙ্গারিয়াবাসী। ছোট্ট গলি পথ দিয়েই গ্রামের অন্যপ্রান্তে যাওয়া যায়। গ্রামের শেষ সীমানার বামের পথটি চলে গেছে ‘ভ্যালি অফ ফ্লাওয়ারস’ এর দিকে এবং সোজা পথটি উপরের দিকে চলে গেছে হেমকুন্ডের দিক। অত্যান্ত নিরিবিলি এই গ্রামটি আসলেই মনে রাখার মত। কারণ সারা ভারত যখন তাপদাহে পুড়তে থাকে, তখন এই গ্রামে ৫০ রুপি দিয়ে গরম পানি কিনে গোসল কিংবা অন্যান্য কাজ করা লাগে। শীতকালের কথা আর নাইবা বললাম। শীতকালের অধিকাংশ সময়ই পুরো ঘাঙ্গারিয়া থাকে বরফের নিচে। সব শহুরে কোলাহল ছেড়ে নিজের মতো করে কয়েকদিন কাটানোর মতো অসাধারণ একটি গ্রাম এই ঘাঙ্গারিয়া। যেভাবে যাবেন কলকাতা থেকে ট্রেনে হরিদ্বার অথবা প্লেনে দেরাদুন। সেখান থেকে জীপ নিয়ে জসিমঠ শহর হয়ে গোবিন্দঘাট। সেখান থেকে আরেকটা জীপে যেতে হয় ট্রেকিং পয়েন্টে। পয়েন্ট থেকে ঘোড়া কিংবা ট্রেকিং করে ঘাঙ্গারিয়া। গোবিন্দঘাট থেকে ৩৩০০ রুপি দিয়ে হেলিকপ্টারে যেতে পারবেন।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন