মনিরা নওরোজ সেতু
পাহাড়ে-জঙ্গলে ট্রেক (Trek) করা, মানে পাহাড়-জঙ্গলের বন্ধুর পথে পাড়ি দেয়া। আর এই বন্ধুর পথে কসরত করে চলার জন্য চাই কিছু প্রস্তুতি। বিশেষ করে আমরা যারা সমতলের মানুষেরা যখন সেখানে যাই, তখন সেই প্রস্তুতিটা না থাকলে বেশ কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়। সামনে চলে আসে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা। সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য এই লেখা।
পাহাড়ে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা যা সকলের জন্য কাজে লাগবে।এইবার জোতলাং ট্রেইল থেকে ফেরার পথে মনে হয়েছে আজকাল মানুষ শুধু ফেসবুকে ছবি দেখে চলে আসে দুর্গম সব পথে। জোতলাং কে বাংলাদেশের সবচেয়ে টাফ ট্রেইল বলা যায়। এই ট্রেইলে নামার আগে অবশ্যই মানসিক, শারিরিক কিছু প্রিপারেশন থাকা উচিত। আর পরিকল্পনা তো অবশ্যই থাকা দরকার। পুরো ট্রেইল শেষ করতে কত সময় লাগতে পারে সেটা যাচাই করা অবশ্যই জরুরি। কারন সেই অনুযায়ী খাবার নিতে হবে। আর যারা গ্রুপে নিয়ে যান তাদেরও উচিত যাদের নিয়ে যাচ্ছেন তাদের যাবার বেশ আগে থেকেই ব্রিফিং দেওয়া।
এইবার জোতলাং ট্রেইলে দেখেছি অনেকের কাছেই হেডল্যাম্প নেই। অথচ জোতলাং ট্রেইলে নেমেছেন। অনেককেই প্রতিটা স্টেপ বলে বা ধরে নিতে হচ্ছে নির্দেশনা দিয়ে দিয়ে, তার মানে সে আগে কখনো ট্রেক করে নি, অথচ নেমে গেছে জোতলাং ট্রেইলে। অনেকের কাছেই নেই শুকনা খাবার।
ট্রেইলে নামলে যে কোন বিপদ আপদ আসতে পারে। হয়ত ৫ ঘন্টার ট্রেইলেও আপনার সঙ্গী বা আপনি নিজেই আহত হতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে রাত হয়ে যাবে। তাই ট্রেকে সাথে হেড ল্যাম্প থাকা জরুরী।
ট্রেকিং এর জন্য খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। একদিনের ট্রেইলে সাথে থাকা চাই খাবার। দ্রুত প্রচুর এনার্জি দেয় এমন সব ড্রাই ফুডস। সেই ক্ষেত্রে একটা ট্রিকস ফলো করা যায় তা হলো প্রচুর চিনি জাতীয় খাবার সাথে রাখা । চিনি খুব দ্রুত ব্রেইন কে এক্টিভ করে দেয়।
ট্রেইলে লম্বা সময় চলতে থাকলে অনেক সময় শরীর বিশেষত হাত-পা কাঁপে। এইজন্য ২০/২৫ মিনিট পর পরই মুখে দিতে পারেন ক্যান্ডি.. যেটা পুরাই চিনির। যেমন ফক্সেস, বা যে কোন ছোট ক্যান্ডি। আর পিনাট বার, ম্যাংগো বার এবং খেজুর। আর পানি তো রাখতেই হবে পর্যাপ্ত। ট্রেইল যদি লম্বা হয়, মানে সময় লাগতে পারে ১২ ঘন্টার বেশি সেই ক্ষেত্রে সাথে রাখতে হবে ওটস বার, কয়েক স্লাইস পাউরুটি, কলা। পাড়া থেকে সেদ্ধ ডিম নিতে পারেন। আর এই সব কিছু নিজের কাছে রাখার জন্য দরকার ডে ব্যাকপ্যাক। অনেক সময় পাহাড়ি পাড়াতে কোন খাবার পাওয়া যায় না সেক্ষেত্রে আগে থেকে যত বেশি খাবার আনা যায় ততই ভালো।
এইবার আসি জুতার কথায় ।ট্রেইলে দেখেছি প্রচুর মানুষ ছেড়া জুতো নিয়ে যুদ্ধ করছেন। পাহাড় এবং পা এই দুইটা একে অন্যের সাথে জড়িত। ভালো মানের জুতা কিনুন। সাথে মোজা ব্যাবহার করুন পায়ে ফোস্কা হবে না। ঐ দুই টাকা সেইভ এর থেকে আপনার একটা আরামদায়ক ট্রেক অনেক গুরুত্বপূর্ন। ট্রেইলে নামলাম আর গায়ের জোরে সব মেরে দিলাম, খেয়ে দিলাম এই ধ্যান ধারনা নিয়ে ট্রেক শেষ হয়ত করা যায়, কিন্তু যেখানে প্ল্যানিং নাই সেখানে সাফল্যকে ঠিক সাফল্য বলা যায় না। সেটাকে ঝড়ে বক মারা বলে।
তাই লম্বা ট্রেইলে নামার আগে সাথে রাখুন
১. হেড ল্যাম্প
২.ভালো জুতা-মোজা
৩.পরিমাণ মত খাবার পানি
৪. আগুন জ্বালাবার লাইটার
৫. ইচ্ছে হলে একটা নাইফ ও রাখতে পারেন
৬.কম পক্ষে ১০ লিটার এর ডে ব্যাকপ্যাক
৭. লাইফ জ্যাকেট।
৭.নিজের উচ্ছিষ্ট ট্রেইলে ফেলবেন না।