পর্যটনের ৫ পুরোধা

ট্রাভেলগবিডি ডেস্ক

আগের যুগে আজকের মতো ইন্টারনেট ছিল না যে ঘরে বসে আঙুলের টোকায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। ফলে কিছু মানুষ জীবন বাজি রেখে বিশ্ব্যাবপী দুর্গম পথে পরিভ্রমণ করেছেন অজানাকে জানার আশায়। যাদের বিচিত্র অভিজ্ঞতায় আজকের পর্যটন খাতের বিকাশ, যাদের দেখানো পথে আধুনিক মানুষ সাহস পেয়েছে দুর্গম পথে পরিভ্রমণের। তেমন পাঁচ পর্যটন পুরোধার সংক্ষিপ্ত পরিচয় পাঠকদের জন্য।

ইবনে বতুতা:

বতুতাকে ইতিহাসের একজন মহান পর্যটক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মরক্কোর তাঞ্জিয়ারের অধিবাসী ইবনে বতুতা মাত্র একুশ বছর বয়সে পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়েছিলেন। তবে তার ধর্মীয় উদ্দেশ্যে এই ভ্রমণ পরে রূপ নিয়েছিল বিশ্বভ্রমণে। ১৩২৫ সালে ঘর ছেড়ে পরবর্তী ৩০ বছরে তিনি লাখো কিলোমিটারের বেশি পথ ভ্রমণ করেছিলেন। মরক্কো থেকে যাত্রা শুরু করে তিনি একে একে মিশর, ইয়েমেন, ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশ, বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় সবকটি দেশ এবং চীন ভ্রমণ করেন।

 হিউয়েন সাং: 

প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে বিশ্বের খ্যাতনামা সব পর্যটকের আগমন ঘটেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন চীনা বৌদ্ধ ভিক্ষু হিউয়েন সাং। ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি উত্তর ভারতে আসেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘসময় অতিবাহিত করেন এবং ভারতবর্ষের বহু স্থান ও বাংলাদেশের বেশকিছু স্থানও ভ্রমণ করেন। ৬৪৫ সালে তিনি চীনে ফেরত যান। দীর্ঘসময় ভারতে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ‘সিদ্ধি’ নামক একখানা গ্রন্থ রচনা করেন। তার এই গ্রন্থ থেকে চীনারা ভারতবর্ষের সামাজিক, আর্থিক, ধর্মীয় তথা সাংস্কৃতিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে।

মার্কো পোলো:

ইতালির অধিবাসী মার্কো পোলো পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। মার্কো পোলো তার বাবা ও কাকার সঙ্গে ১২৭২ সালে ব্যবসায়িক উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এই যাত্রায় তিনি সিল্ক রোড ধরে পারস্য, আফগানিস্তান হয়ে চীনে পৌঁছান। এরপর তিনি ভারত ও ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ করেন। তিনি সর্বমোট ২৪ বছরের অধিক সময়ে ভ্রমণ যাত্রা শেষ কওর দেশে ফিরে যান। তার দীর্ঘদিনের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ‘ট্রাভেলস অব মার্কো পোলো’ বই আকারে বের হলে ইউরোপিয়রা ভারতীয় উপমহাদেশ সম্পর্কে জানতে পারে ও এই উপমহাদেশে আসতে থাকে।

জেমস কুক:

প্রথম জীবনে জেমস কুক ছিলেন সামান্য একজন মুদি দোকানি। এরপর নানান পেশা ঘুরে যোগ দেন বৃটিশ নৌবাহিনীতে। তার পরিব্রাজক জীবনের শুরু ১৭৬৮ সালে। বৃটিশ সরকারের পক্ষে তিনি একটি বৈজ্ঞানিক মিশনের দায়িত্ব নিয়ে সমুদ্র যাত্রা শুরু করেন। পরিব্রাজক হিসেবে উত্তর এবং দক্ষিণ মেরু, সাত মহাদেশ এবং অসংখ্য সাগর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ছিল জেমস কুকের।

ফার্দিনান্দ ম্যাগিলান: 

পর্তুগিজ পরিব্রাজক ফার্দিনান্দ ম্যাগিলান স্পেন থেকে সমুদ্র যাত্রা করেন। উদ্দেশ্য ছিল এশিয়ার পূর্বাংশ ভ্রমণ। তার বহরে ছিল ২৭০ নাবিক এবং পাঁচটি জাহাজ। দুঃসাহসী ম্যাগিলান তার এই বহর নিয়েই প্রথম নৌপথে বিশ্ব ঘুরেছিলেন। ১৫২১ সালের অভিযানের সময় কেইপ অব হর্নের বিক্ষুদ্ধ সাগর পেরিয়ে হঠাৎ শান্ত পানির সাগরের সন্ধান পান ম্যাগিলান। তিনি ওই সাগরের নাম রাখেন ‘মার প্যাসিফিকো’ বা ‘শান্ত সাগর যা প্রশান্ত মহাসাগর নামেই পরিচিত। ১৮ শতক পর্যন্ত অনেকেই ম্যাগিলানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরকে ম্যাগিলানের সাগর বা সি অব ম্যাগিলান নামে ডাকত। এছাড়া প্রশান্ত ও আটলান্টিক মহাসাগরকে সংযোগকারী ম্যাগিলান প্রণালীর আবিষ্কারকও তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন