চীন ভ্রমণের আগে জেনে নিন ৭ বিষয়

আতিক নয়ন

শতশত বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ চীন বাংলাদেশিদের ভ্রমণ পছন্দের প্রথম সারির দেশগুলোর একটি। বিশ্বের প্রায় সব দেশের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছেও দেশটি এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। তবে প্রথমবারের মতো চীন ভ্রমণে গিয়ে আপনি নানা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখিন হতে পারেন। এজন্য ভ্রমণের আগে সে দেশের কিছু নিয়ম-নীতি ও আদব-কায়দা সম্পর্কে জেনে পূর্বপ্রস্তুতি থাকা অবশ্যক। এ পর্যায়ে আপনার প্রথম চীন ভ্রমণের জন্য কিছু পরামর্শ:

ভিসা: 

যেকোনো দেশের মতো চীন ভ্রমণের জন্য প্রথমেই আপনার প্রয়োজন হবে ভিসা। প্রথমবার চীনের ভিসা পাওয়াটা একটু জটিল। তাই ভ্রমণের অন্তত দুইমাস আগে আপনাকে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ভিসার আবেদনের জন্য যা যা প্রয়োজন হবে,

১। অন্তত ছয়মাস মেয়াদ সম্পন্ন পাসপোর্ট

২। ব্যাংক ষ্টেটম্যান্ট (বিগত ৬ মাসের) ও ব্যাংক সলভেন্সি

৩। ব্যবসায়ীদের জন্যে ট্রেড লাইসেন্স ইংরেজিতে অনুবাদসহ নোটারি কপি

৪। চাকুরিজীবীদের জন্যে অফিস থেকে এনওসি লেটার (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট)

৫। কোম্পানি প্যাড ও ভিজিটিং কার্ড

৬। অফিসের আইডি কার্ডের কপি (চাকুরিজীবীদের জন্য)

৭। ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড)

৮। স্পাউস সাথে থাকলে তার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কপি ও ম্যারেজ সার্টিফিকেট

৯। সন্তান থাকলে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট ও স্কুলের পরিচয়পত্র। 

ভ্রমণের সময়: 

গ্রীষ্মকালে (জুন-আগস্ট) চীনে ভ্যাপসা গরম অনুভুত হয়। গড় তাপমাত্র থাকে ২৫-৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এই সময়েই চীনের প্রকৃতি যেন নতুন সাজে আবির্ভূত হয়। সংখ্যালঘুদের জমকালো উৎসবগুলো অনুষ্ঠিত হয় এ সময়ে। ফলে ছুটি কাটাতে চাইনিজ ও বিদেশি পর্যটকদের একটি বড় অংশ এ সময়টাতেই পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ভিড় করেন। তবে আরামদায়ক তাপমাত্রা ও নিরিবিলি পরিবেশে ভ্রমণের জন্য অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সেরা সময়। ভ্রমণকেন্দ্র চীনের সেরা পর্যটনকেন্দ্রগুলোর তালিকায় আছে বেইজিং, সাংহাই, শিয়ান, গিলিন, খুনমিং প্রভৃতি। একেক পর্যটনকেন্দ্রের একেক বৈশিষ্ট্য। অঞ্চলভেদে আবহাওয়াও ভিন্নতর। স্থানীয় সংস্কৃতি আর অতেথিয়তার জন্য বিখ্যাত শিয়ান ও শিনজি অঞ্চল দু’টি। এখানকার বিশেষ আকর্ষণ ‘টেরা কোট্টা আর্মি’ পরিদর্শন এবং ‘মাউন্ট হুয়েশন’। প্রথমবারের জন্য ভ্রমণার্থিরা এ জায়গাগুলো বেছে নিতে পারেন।

ভাষা: 

চীনে বিদেশিদের জন্য ভাষাগত প্রতিবন্ধকতাটি সবচেয়ে বড় সমস্যা। সেখানে প্রধান ভাষা দু’টি: মান্দারিন ও কেন্টোনিজ। শহরগুলোতে ইংলিশ ভাষার কিছুটা ব্যবহার থাকলেও শহরের বাইরের মানুষ নিজেদের ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় মোটেই কথা বলতে পারে না। সেখানে চাইনিজ ভাষা না জানা থাকলে আপনার জন্য মহাবিপদ। এ বিপদ উতড়ানোর জন্য চাইনিজ ভাষার কিছু মৌলিক শব্দ ও শব্দগুচ্ছ জানা থাকা খুবই উপকারী।

সেন্সরশিপ: 

চীনে গণমাধ্যম থেকে শুরু করে ইন্টারনেট ভিত্তিক সকল মাধ্যমে সেন্সরশিপ আরোপিত। ফলে চীনে গিয়ে আপনি ফেসবুক ও টুইটারের মতো জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে পারবেন না। এমনকি ই-মেইল ব্যবহারেও সমস্যার সম্মুখিন হতে হবে আপনাকে। এজন্য আপনি সেলফোন বা কম্পিউটারে ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন। অথবা চীনে বৈধ- এমন কোনো সমাজিক মাধ্যম অবলম্বন করতে হবে।

সাংস্কৃতি: 

অচেনা সংস্কৃতি চীনের জীবনাচরণ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেকটা ভিন্নতর। এমনকি দেশের অভ্যন্তরেও একেক অঞ্চলের রীতিনীতি একেক রকম। তাই আপনি যেখানে যাচ্ছেন সেখানকার আদব-কায়দা সম্পর্কে আগে থেকেই জেনে নিন।

বায়ু দূষণ: 

বড় শহরগুলোতে আপনি বায়ু দুষণের সম্মুখিন হতে পারেন। ফুসফুসের সুরক্ষার জন্য সেখানে মাস্ক ব্যবহার করুন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চীনের ফুটপাথ থেকে কিছু কেনার ইচ্ছে না থাকলে দরদাম করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ, একবার যদি আপনি কোনো বিক্রেতার কাছে কোনো জিনিসের দাম জিজ্ঞেস করেন, না কেনা পর্যন্ত হয়তো সেই বিক্রেতা আপনার পেছন পেছন দীর্ঘ সময় ঘুরঘুর করতেই থাকবে। স্বাস্থ্য সচেতনতা চীনে বায়ু ও পরিবেশ দুষণ একটি বাস্তবতা। তাই সেখানে স্বাস্থ্যের প্রতি যন্তশীল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যথা সম্ভব বড় শহরগুলোর বাহিরে থাকার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি রাস্তার খাবার এড়িয়ে চলুন। পানির বোতল সাঙ্গে রাখুন। এছাড়াও সঙ্গে রাখুন টয়লেট পেপার ও হ্যান্ড সেনিটাইজার।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন