ঘোল খেতে ভাগ্যকুল বাজারে

আরিফুল রাজিব

জ্ঞানী গুণী বুদ্ধিমান মানুষ মাওয়া ঘাটে যায় ইলিশ খেতে আর আমার মতো বোকাসোকা মানুষ যায় ঘোল খেতে। তাইতো ভরদুপুরে কড়া রোদে মাওয়া ঘাটে এসে কটকটা গরমে মেজাজ খড়খড়া করে মাওয়া ঘাট থেকে পদ্মা পারের লোকাল রাস্তা ধরে পৌছালাম ভাগ্যকুল বাজারে, চিত্তরঞ্জন সুইটসের ঘোল খেতে। মাওয়া থেকে ভাগ্যকুল বাজারের দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। ভাগ্যকুল বাজারে গিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম চিত্তরঞ্জন এর মিষ্টির দোকান কোনটা? তিনি রাস্তা দেখিয়ে বললেন, এই রাস্তার একেবারে শেষ মাথায় পদ্মা নদীর পারে যে মিষ্টির দোকান পাবেন ঐটাই চিত্তরঞ্জন এর মিষ্টির দোকান।

আহ! প্রশান্তি

সাদামাটা জরাজীর্ণ টিনের দোকান ঘর কিন্তু যথেষ্ট পরিষ্কার পরিছন্ন। দোকানের ভেতরে বসার জন্য কয়েকটা কাঠের ব্রেঞ্চ আর টেবিল। দোকানে ভিড় নেই যদিও তবে বন্ধের দিনে চেহারা টা ভিন্ন থাকে। দোকানের এক পাশে কাচের শো-কেসে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি সাজানো কিন্তু ও সবের দিকে খুব বেশি একটা নজর না দিয়ে সরাসরি অডার করলাম ঘোল। মিনিট খানিকের মধ্যে চলে আসলো গ্লাস ভর্তি ঠান্ডা ঘোল। সাদা ঘোলের উপর একটুকরো লেবু ভাসছে। দেখে আর তোর সইছিলো না। মুখে দিতেই চোখমুখ বন্ধ হয়ে এলো। কেমন যেনো একটা ভিমরি খেয়ে গেলাম। এই কাঠফাটা রোদে তৃষ্ণার্ত বুকে কেমন যেনো একটা শিহরণ বয়ে গেলো। ঝিমিয়ে গেলো শিরা-উপশিরা গুলো। এক পিস লেবু দেয়া ঠান্ডা ঘোলে কি এমন অদ্ভুত প্রশান্তি! ভিমরি কাটিয়ে উঠার আগেই দেখি দুই গ্রাস শেষ।

সাজানো গোছানো মিষ্টির দোকান

ঘোলও এতো মজার হতে পারে! নিঃসন্দেহে বলতে পারি এ ঘোলের স্বাদ অতুলনীয়। এতো দুই এক গ্লাসে মন ভরার জিনিস নয়। নিয়ে নিলাম আরেক গ্লাস। এবার গ্লাস ভর্তি ঘোল নিয়ে চলে গেলাম পদ্মা পাড়ে। এমন গরমে পদ্মার নির্মল পরসে গ্লাস ভর্তি ঠন্ডা ঘোল মুখে দিতেই ঘুম পেয়ে গেলো। মন চাচ্ছিলো নদীর পাড়ে কোন গাছে হ্যামক ঝুলিয়ে একটু ঘুমিয়ে নেই।

চিত্তরঞ্জন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার

মুন্সিগঞ্জ জেলার পূর্ব নাম ছিলো বিক্রমপুর। ভাগ্যকুল মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার একটি বাজার। ভাগ্যকুল বাজার অনেক আগে থেকেই মিষ্টান্নের জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির জন্য গোবিন্দ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও চিত্তরঞ্জন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এর রয়েছে বেশ ডাক রয়েছে। তবে ঘোলের জন্য চিত্তরঞ্জন মিষ্টান্ন ভাণ্ডারই সেরা ও অতুলনীয় ।ঢাকা সহ সারাদেশে যে ভাগ্যকুল মিষ্টান্ন ভান্ডার বা এই ধরণেল যে নাম আছে তার উৎপত্তি কিন্তু এই ভাগ্যকুল বাজার। ভাগ্যকুলের মিষ্টান্ন বলতে কোন নির্দিষ্ট দোকান নেই, তাই আসল ভাগ্যকুল মিষ্টান্নের স্বাদ নিতে হলে অবশ্যই আসতে হবে ভাগ্যকুল বাজারে ।

 

মুন্সিগঞ্জ, ২৬.১০.২০

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন