খানদানি বাকরখানির স্বাদ

দিবাকর

ঢাকা চারশতে পা দিয়েছে শুধু সময়ের হিসাবে নয়; এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নানা আভিজাত্য, অভ্যেস, রুচিবোধ আর ঐতিহ্য। ঢাকাইয়া গালি আর বুলির মতো ঢাকাইয়া খাওয়া-দাওয়া অনন্য বিশ্ব মানচিত্রে। রাজধানীর সূচনাতে মোগলরা এসেছে। তারপর ব্রিটিশরা। সবশেষে পাকিস্তান। এখন বাংলাদেশ। মোগলাই রুটি আর হালিম আমরা খেতে অভ্যস্ত, ঠিক একইভাবে বিরিয়ানি তেহারি। কিন্তু ঢাকার নগর জীবনে স্থান করে আছে রুটির নানা স্বাদ। যার জুড়ি মিলবে না আর কোন শহরে। এ শহরেই মিলবে এ রুটির। পুরনো ঢাকার অলি-গলিতে ছেয়ে আছে বাকরখানি রুটির দোকান। ঢাকার আদি অধিবাসী মানেই নাশতার টেবিলে বাকরখানি। চা কিংবা মিষ্টি সঙ্গে চাই বাকরখানি। ঢাকার বিনোদন বইতে রফিকুল ইসলাম লিখেছেন, ঢাকার নানা রকম রুটি যেমন-বাকরখানি, শীরমাল, চাপাতি, নান রুটি, নানপাঁও বা পাউ রুটি, বাগদাদি রুটি, বিভিন্ন রকম শবরাতি রুটি ও চালের রুটি ইত্যাদি। এসব রুটির মধ্যে বাকরখানি ও শীরমাল হলো উল্লেখযোগ্য।

হাকিম হাবিবুর রহমান তার ছোটবেলায় অর্থাৎ আজ থেকে একশ বছর আগে স্মৃতিচারণ করেছেন এভাবে- ‘আমি চোখ মেলেই এই দেখেছি যে, সমগ্র ঢাকা সকালে নাস্তায় বাকরখানি খাচ্ছে।’ বাকরখানি ঢাকাবাসীর কাছে অতীতের মতো এখনও জনপ্রিয়। ভোরের নাশতায় ঢাকাইয়াদের বাকরখানি ছাড়াও সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই রুটি। পুরান ঢাকার প্রায় প্রতি মহল্লায় ও রাস্তার মোড়ে অন্তত এক থেকে দুটি বাকরখানির দোকান পাওয়া যায়। এসব দোকান ছাড়াও আনন্দ কনফেকশনারি, বোম্বে সুইটস ও কনফেকশনারি, ক্যাপিটাল কনফেকশনারি, ইউসুফ ও সোহাগ বেকারি ইত্যাদি দোকানেও উন্নতমানের বাকরখানি পাওয়া যায়। ঢাকার নদীর ওপারের মান্দাইল এলাকার কয়েকটি দোকানে খাস্তা বাকরখানি পাওয়া যায়। বিশেষভাবে তৈরি মাটির তন্দুরে এই রুটি বানানো হয়। বাকরখানি অনেক রকমের হয়। যেমন-পনিরের বাকরখানি, ছানার বাকরখানি, চিনির বাকরখানি, ওভালটিন বাকরখানি, কিমার বাকরখানি, নারিকেলের বাকরখানি, স্পেশাল নোনতা বাকরখানি, মোলায়েম, গাওজোবান, নামকিন, বুটিদার ইত্যাদি।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন