উদ্দাম নৃত্য ও ফোক থিয়েটারের মঁলা রুজ (পর্ব-১)

মাসুদুল হাসান রনি

 

প্যারিসে আমার যাওয়া হয়েছে মোট চৌদ্দবার। বেশীরভাগ সময় আমার থাকা হয়েছে প্লাস দ্যু ক্লিসি এভিনিউ বা বুলভার্ড প্লাস দ্যু ক্লিসির আশেপাশে। কাজী এনায়েতউল্লাহ ইনু ভাইয়ের ক্যাফে লুনার গেস্টহাউজ অথবা ইবিস হোটেলে। ২০১৪ 'র পর অবশ্য সব সময় উঠেছি লা পমিয়ে আমার ডাক্তার বোনের বাসায়। যতোবার প্যারিস গিয়েছি ততোবারই আমি সান্নিধ্য কামনা করতাম প্রিয় শওকত ভাইয়ের। যার হাত ধরে আমি প্যারিসের অলিগলি চিনেছি। আসলে শওকত ভাই না থাকলে হয়তো কখনোই আমি প্যারিসকে ঢাকা শহরের মতন করে চিনতাম না।

২০১৩ সালের জুন মাসে জার্মানীর ডুসেলড্রফ থেকে প্যারিস এসে উঠি ইনু ভাইয়ের ক্যাফে লুনার গেস্ট হাউজে। সারাদিন ইনু ভাই ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।উনার সাথে আমার দেখা হয় গভীর রাতে। কিন্তু শত ব্যস্ততার মাঝেও উনি ঠিকই ফরিদ মামার কাছে আমার খবর নিতেন। সকাল, দুপুর খেয়েছি কিনা, কোথাও ঘুরতে যাব কিনা ইত্যাদি।

একদিন রাতে ডিনার টেবিলে ইনুভাই বললেন, প্যারিস এসে কেউ মঁলা রুজ না দেখে ফিরে যায় না। আপনি কাল দেখে আসেন। আমি হ্যাঁ না কিছু বলি না। আসলে মঁলা রুজ কি, এ প্রসঙ্গে আমার কোন পুর্ব ধারণা ছিল না। রুমে ফিরতে নুরুল ওয়াহিদ ভাই মঁলা রুজের টিকেট ধরিয়ে দিলেন। কাল সন্ধ্যার শোয়ের টিকেট।

মঁলা রুজ

 

পরের দিন দুপুর গড়িয়ে বিকাল। আমি ক্যাফে লুনার রাস্তার ধারে পেতে রাখা টেবিল চেয়ারের কোনায় বসে ঝকঝকে এক ফালি রোদ গায়ে মাখছি। ক্যাফের ভিতরে প্রচুর মানুষ। কফির কাপে বা বীয়ারের গ্লাসে তাদের উত্তেজনা । অনেককে দেখি বাহিরের চেয়ার টেবিলে কফি বা ওয়াইন নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডা দিচ্ছে। কোন বিরক্তি নেই । এরকম কাফেতেই জন্ম নিয়েছে প্যারিসের জগৎবিখ্যাত চিত্রকর, শিল্পীরা।

প্লাস দ্যু ক্লিসি এভিনিউতে প্রচুর নাইট ক্লাব, বার। সূর্য পশ্চিমাকাশে দেখা দিলেই এসব জায়গায় শুরু হয়ে যায় মক্ষীরানিদের আনাগোনা । সন্ধ্যা নেমে আসতে উঠে পড়ি। আমার গন্তব্য প্লাস দ্যু ক্লিসি'র পাশেই ব্লুবার্ড ক্লিসিতে দেড়শত বছরের পুরানো থিয়েটার মঁলা রুজ। মঁলা রুজ বিনোদন জগতে এবং ফরাসিদের হৃদয়ে একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে। এটি বিনোদনের জন্য শুধু একটি জায়গা নয়, এটা প্যারিস ইতিহাসও।প্রতিদিন এখানে বেশ কটি শো হয় । গ্রীষ্মে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভীড় থাকে। শীতের প্রতিটা শো হাউজফুল ও জমজমাট । চাহিবামাত্র টিকেট পাওয়া যায় যায় না কয়েক মাস আগে থেকে টিকেট বুকিং দিতে হয়।

১৮৮৯ সালে মঁলা রুজের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৫ সাল থেকে বেশ লম্বা সময় বন্ধ ছিল। দীর্ঘ সাত বছর পরে মঁলা রুজের দরজা দর্শকদের জন্য পুনরায় খুলে দেয়া হয়।

নৃত্য
 

২০১৩ সালের পর আরো দু'বার মঁলা রুজে শো দেখতে গিয়েছিলাম। মঁলা রুজে প্যারির এইতিহ্যবাহী কান কান নাচ, ফোক থিয়েটার যে কোন দর্শককে বিমোহিত করে। আপনি প্যারিস যাবেন, প্যারিসের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখা হবে। অথচ মঁলা রুজ দেখা হবে না, এটা কি হয়!

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন