ট্রাভেলগবিডি ডেস্ক
পাসপোর্ট এক ধরণের নথি, যা একটি দেশের সরকার কর্তৃক তার নাগরিককে প্রদান করা হয়। বিদেশ ভ্রমণকালে নাগরিকের পরিচয় ও জাতীয়তা নিশ্চিত করে পাসপোর্ট। স্বাধীনতাত্তোর স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে পূর্ণাঙ্গরূপে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশ সরকার নাগরিকদের বহির্গমণের সুবিধার জন্য পাসপোর্ট প্রদান করে আসছে। পাসপোর্টের রকমফেরে সর্বশেষ সংযোজন ই-পাসপোর্ট। ২২ জানুয়ারি ২০১৯, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ই-পাসপোর্ট কর্মসূচি এবং স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনার উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো।
ই-পাসপোর্ট কী:
বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) বা যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্টের মতো ই-পাসপোর্টে বা ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বইও একই রকমের থাকবে। তবে যন্ত্রে পাসপোর্টের বইয়ে প্রথমে যে তথ্য সংবলিত দুটি পাতা থাকে, ই-পাসপোর্টে তা থাকবে না। সেখানে পালিমারের তৈরি একটি কার্ড ও অ্যান্টেনা থাকবে। সেই কার্ডের ভেতরে চিপ থাকবে, যেখানে পাসপোর্ট বাহকের সব তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। ডাটাবেজে থাকবে পাসপোর্টধারীর তিন ধরণের ছবি, ১০ আঙ্গুলের ছাপ ও চোখের আইরিশ। ফলে যেকোনো দেশের কর্তৃপক্ষ সহজেই ভ্রমণকারী সম্পর্কে সব তথ্য জানতে পারবেন।
এমআরপি ও ই-পাসপোর্টের পার্থক্য:
এমআরপি ও ই-পাসপোর্টের মধ্যকার পার্থক্যকে তুলনা করা যেতে পারে অনেকটা চেকবই এবং এটিএম কার্ডের সঙ্গে। চেক বই ব্যাংক কর্মকর্তার হাতে স্বাক্ষর ও যাচাইবাছাই করে টাকা প্রদান করেন। কিন্তু এটিএম কার্ড দিয়ে সংক্রিয়ভাবে যে কেউ নিজ থেকেই টাকা তুলতে পারেন। তেমনি এমআরপি পাসপোর্টে অভিবাসন কর্মকর্তারা তথ্য যাচাই বাছাই করে পাসপোর্টে সিল দিয়ে থাকেন। কিন্তু ই-পাসপোর্টধারী যন্ত্রের মাধ্যমে নিজে থেকেই ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করতে পারেন। তবে পরবর্তী ধাপে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারাই পাসপোর্টে আগমণ অথবা বর্হিগমন সিল দেবেন। ই-পাসপোর্টের সুবিধা কী? ই-পাসপোর্টের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো খুব দ্রুত ও সহজে ভ্রমণকারীরা যাতায়াত করতে পারবেন। ই-গেট ব্যবহার করে তারা যাতায়াত করবেন। ফলে বিভিন্ন বিমানবন্দরে তাদের ভিসা চেকিংয়ের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হবে না। এর মাধ্যমে দ্রুত তাদের ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হয়ে যাবে। একজন ই-পাসপোর্টধারী ভ্রমণকারী ই-পাসপোর্ট ব্যবহার করে যাতায়াত করবেন, সঙ্গে সঙ্গে সেটি কেন্দ্রীয় তথ্যাগারের (পাবলিক কি ডাইরেক্টরি-পিকেডি) সঙ্গে যোগাযোগ করে তার সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবে।
ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে যাতায়াত:
ই-গেটের নির্দিষ্ট স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাঁড়ালে ক্যামেরা ছবি তুলে নেবে। থাকবে ফিঙ্গারপ্রিন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থাও। সব ঠিক থাকলে তিনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন। তবে কোন গরমিল থাকলে লালবাতি জ্বলে উঠবে। তখন সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করবেন। কারো বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকলে, সেটিও সঙ্গে সঙ্গে জানা যাবে। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও) এই পিকেডি পরিচালনা করে। ফলে ইন্টারপোলসহ বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এসব তথ্য যাচাই করতে পারে। এখানে ৩৮টি নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য থাকায় এ ধরণের পাসপোর্ট জাল করা সহজ নয়। মেয়াদ: আপাতত পাঁচ ও দশ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। বয়সভেদে পাসপোর্টের এই মেয়াদ নির্ধারণ করা হবে। ফি: ই-পাসপোর্টের আবেদন অনলাইনে করার সময় এর ফি পরিশোধ করা যাবে। পাসপোর্ট ফি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব করা হবে। বাংলাদেশে থাকা পাসপোর্ট অফিসের আবেদন জমা দেয়ার ক্ষেত্রে অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে। এছাড়াও নির্ধারিত কিছু ব্যাংকের মাধ্যমেও পাসপোর্ট ফি জমা দেয়া যাবে। ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট স্বাভাবিক সময়ে অর্থাৎ ২১ কার্যদিবসে পেতে হলে জমা দিতে হবে ৪,০২৫ টাকা। একই পাসপোর্ট এক্সপ্রেস ডেলিভারি অর্থাৎ ১০ কর্মদিবসে পেতে লাগবে ৬,৩২৫টাকা। দুই কর্ম দিবসে পেতে হলে ৮,৬২৫ টাকা জমা দিতে হবে।
১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট ২১ কর্ম দিবসে পেতে হলে ৫,৭৫০ টাকা, ১০ কর্মদিবসে পেতে ৮,০৫০ টাকা এবং দুই কর্মদিবসে পেতে ১০,৩৫০ টাকা জমা দিতে হবে। অন্যদিকে ৫ বছর মেয়াদী ৬৪ পাতার পাসপোর্ট ২১ দিনে পেতে ৬৩২৫ টাকা, ১০ কর্মদিবসে পেতে ৮৬২৫ টাকা এবং দুই কর্মদিবসে পেতে ১২,০৭৫ টাকা ফি জমা দিতে হবে। একই সংখ্যক পাতার ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট ২১ কর্ম দিবসে পেতে ৮,০৫০ টাকা, ১০ কর্মদিবসে পেতে ১০,৩৫০টাকা এবং সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির মাধ্যমে মাত্র দুই কর্মদিবসে পেতে হলে ফি দিতে হবে ১৩ হাজার ৮০০ টাকা। ই-পাসপোর্টেও কী ভিসা নিতে হবে?
প্রচলিত ব্যবস্থার মতো ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ভিসার বিষয়টি একই থাকবে[/caption] প্রচলিত ব্যবস্থার মতো ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ভিসার বিষয়টি একই থাকবে। অর্থাৎ বিভিন্ন দেশের নিয়ম অনুযায়ী সরাসরি বা অনলাইনে ভিসার শর্ত পূরণ করেই ভিসা নিতে হবে। ভিসা কর্তৃপক্ষ বা দূতাবাসগুলো এই পিকেডি ব্যবহার করে আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে নিতে পারবে। এরপরে তারা বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার, সিল দিতে পারবে বা বাতিল করে দিতে পারবে। আপাতত ই-পাসপোর্টের পাশাপাশি প্রচলিত এমআরপি পাসপোর্ট ব্যবস্থাটিও বহাল থাকবে। তবে নতুন করে আর কাউকে এমআরপি পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে না। বর্তমানে এমআরপি পাসপোর্টধারীরা যখন নবায়ন করতে যাবেন, তখন তাদেরকেও ই-পাসপোর্ট দেয়া হবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সব এমআরপি পাসপোর্ট তুলে নেয়া হবে।
তথ্যসূত্র: BBC and Department of Immigration & Passports
