আধুনিক শিল্পপার্কের পথিকৃত

ট্রাভেলগবিডি ডেস্ক

টেলেমার্ক। নরওয়ের একটি প্রশাসনিক কাউন্টি। টেলেমার্ক কাউন্টির নটোডেন অঞ্চলে প্রায় দুইশত বছর আগে গড়ে ওঠে একটি শিল্পাঞ্চল। শুধু নটোডেন নয় প্রতিবেশী রজকুন শিল্পাঞ্চলও জগদ্বিখ্যাত। প্রাচীনকাল হতে আজকের শিল্প উন্নয়নের পথিকৃত হিসেবে এই দুটি অঞ্চল সারাবিশ্বে সমাদৃত। শিল্পবিপ্লবের শুরু আঠারো শতকের শেষের দিকে। প্রথমে ইংল্যান্ড তারপর আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে পরিচিত স্ক্যান্ডেনেভিয়ান রাষ্ট্র নরওয়েতে এ বিল্পবের হাওয়া অনুভূত হয় ঊনিশ শতকের গোড়ার দিকে।

নটোডেন

নটোডেনের ঐতিহ্যবাহী শিল্পস্থাপনাগুলো ছিল নরওয়েতে শিল্প বিপ্লবের ধারাকে ত্বরান্বিত করার ঐকান্তিক প্রয়াস। বিশ শতকের গোড়ার দিকে নরওয়েতে মোটামুটিভাবে জলবিদ্যুৎ সহজলভ্য হয়ে ওঠে। সমসাময়িক কালে ক্রিস্টিয়ান বেকল্যান্ড নামে এক পদার্থবিদ বাতাস থেকে নাইট্রোজেন শোষণের প্রক্রিয়াকে উন্নত করেন। সার তৈরির অন্যতম উপাদান নাইট্রোজেন। দুইয়ে-দুইয়ে যেমন চার হয়, তেমনি এই দুই প্রযুক্তির সমন্বয়ে নরওয়েতে শিল্প বিপ্লব ত্বরান্বিত হয়। যে কারোর-ই দৃষ্টিভ্রম হতে পারে যে এটা শিল্পাঞ্চল, না পার্ক।  আজকের দিনে প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পপার্ক স্থাপনের যে ধারণা প্রসার পেয়েছে, তা সম্ভবত নটোডেন-রজকুন শিল্পাঞ্চল স্থাপনের মাধ্যমেই শুরু। শিল্পাঞ্চলটি নদী, ঝরনা ও উপত্যকাবিধৌত টেলমার্কে অবস্থিত। এটিকে শিল্পাঞ্চল না বলে শিল্পপার্ক বলাই ভাল। শিল্পাঞ্চলটির মধ্যে রয়েছে জল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সার উৎপাদনের কারখানা, উৎপাদিত সার লোড ও আনলোডর চমৎকার ব্যবস্থা, পরিবহন সুব্যবস্থা এবং সর্বোপরি কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের থাকার সুব্যবস্থা। পুরো শিল্পাঞ্চলটি ছবির মতো সাজানো। দেখে যে কারোর-ই দৃষ্টিভ্রম হতে পারে যে এটা শিল্পাঞ্চল, না পার্ক?

শিল্প আর প্রকৃতির এমন সন্মীলন সত্যিই মন ভোলাবে

পাহাড়-নদী-ঝরনার অপূর্ব সন্নিবেশে আর মানুষের পরিকল্পনায় নরওয়ের এই শিল্পাঞ্চল জগদ্বিখ্যাত। কলকারখানার ভেতরটা কর্মব্যস্ত। বের হলেই পাহাড়ের মধ্যে হারিয়ে গিয়ে নিস্তব্ধতা উপলব্ধি করার সুযোগ রয়েছে। আবার পাহাড়ি ঝরনা থেকে সৃষ্ট নদীতে উড়ে আসা বাতাস গায়ে লাগিয়ে নিতে পারেন যে কেউ। শিল্প আর প্রকৃতির এমন সন্মীলন সত্যিই মন ভোলাবে।[/caption] জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পাঞ্চলকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করেছে। ইউনেস্কোর ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, রজকুন-নটোডেন শিল্পাঞ্চলটি ব্যতিক্রমী শিল্পস্থাপনার পরিচয়বহন করে। বিশ শতকের যে কোনো শিল্পাঞ্চলের জন্য নটোডেন দৃষ্টান্ত। বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা দেয়ার পর অনেকেই নটোডেনের শিল্পসৌন্দর্য দেখতে নরওয়ে যাচ্ছেন।    

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন