শাহীদুল ইসলাম
একথা সকলেই জানে যে, অক্সিজেন ছাড়া পৃথিবীর কোনো প্রাণীই বাঁচতে পারে না। কিন্তু ২০১৭ সালে একদল বিজ্ঞানী ভূমধ্যসাগরের তলদেশে এমন প্রাণীর সন্ধান পেয়েছিলেন, যারা গোটা জীবন অক্সিজেন ছাড়াই বেঁচে থাকে। বিজ্ঞানীদের এমন ঘোষণার পর সারা বিশ্বের প্রাণীবিদ্যার নামকরা সব অধ্যাপকেরা ভাবতে শুরু করেছেন, তবে কি বায়োলজির বই আবারো নতুন করে লিখতে হবে? কারণ প্রাণীবিদ্যা সংক্রান্ত সকল বইয়ে স্পষ্ট করে লেখা আছে, অক্সিজেন ছাড়া কোনো প্রাণীই বাঁচতে পারে না।
কিন্তু ২০১৭ সালে করা এক অনুসন্ধানে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছিলেন, ভূমধ্যসাগরের অতি ক্ষুদ্র অনুজীব লরিসিফ্রেনস অক্সিজেন ছাড়াই বেঁচে থাকতে পারে। ভূমধ্যসাগরের একেবারে তলদেশে বাস করা লরিসিফ্রেনস খালি চোখে দেখা যায় না। এটি দেখতে অনেকটা বড় সাইজের এককোষী জলজ আণুবীক্ষণিক জীব অ্যামিবার মতো দেখতে।
ইতালির পলিটেকনিক ইউনির্ভাসিটি অব মার্সে এর অধ্যাপক রবার্তো দানোভারো এই প্রাণীর আবিষ্কারক। তিনি ও তার দল ইতালির লা-আটলান্টা অববাহিকায় এক দশক ধরে ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন লরিসিফ্রেনস নামের এই প্রাণী অক্সিজেন ছাড়াই বেঁচে থাকে।কারণ বিজ্ঞানীরা লা-আটলান্টা অববাহিকার যে স্থানে এই অনুজীবের সন্ধান পেয়েছিলেন ওই স্থানটি এত বেশি লবণাক্ত যে গত পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি সময় ধরে জায়গাটি অক্সিজেন শুণ্য হয়ে রয়েছে। আর এমন অক্সিজেন শুণ্য স্থানে পাওয়া গেছে প্রাণী জগতের নবীনতম আবিষ্কার লরিসিফ্রেনস।
বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক রবার্তো দানোভারো নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, আমরা যখন প্রথম প্রাণীটি দেখতে পেলাম তখন আমরা নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কারণ এরকম অক্সিজেন শুণ্য জায়গায় কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব থাকাটা একেবারেই বিস্ময়কর। এর ফলে আমরা ঘোষনাটি দিতে প্রায় এক দশক সময় নিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা জানি যে ফ্লাটওয়ার্ম নেমাটোডের মতো মতো কিছু পরজীবী আছে যারা জীবনের একটা বড় সময় ধরে অক্সিজেন ছাড়াই বেঁচে থাকে তবে লরিসিফ্রেনসের মতো গোটা জীবন নয়। তবে তিনি এখনো শতভাগ দাবি করেননি যে, লরিসিফ্রেনস গোটা জীবনই অক্সিজেন ছাড়াই কাটিয়ে দেয়। তিনি ও তার গবেষণা দল এখনো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন এবং এরপরই চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন। ততদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে যে আসলেই কি লরিসিফ্রেনস অক্সিজেন ছাড়াই পুরো জীবন বেঁচে থাকে?